| বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
গাজায় বর্বর গণহত্যা, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ঠুকেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আরব বিশ্ব গাজা ইস্যুতে কার্যকর কোন ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার সাহসী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববাসী। ইসরাইলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বকে পৌছে দিয়েছে নতুন বার্তা। নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কাঠগড়ায় দাঁড়াল ইসরাইল।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ইসরাইলের বিরুদ্ধে ৮৪ পৃষ্ঠার নথিতে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইসরাইলের বিরুদ্ধে দুদিনের শুনানির প্রথম দিনই শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরাইলের অতিরিক্ত দুই বিচারকের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় বিচারপর্ব । এরপর একের পর এক চলে যুক্তি স্থাপন বক্তৃতা। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী ম্যাক্স ডু প্লেসিস তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ইসরাইল বছরের পর বছর ধরে আইন লঙ্ঘন করে গাজায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভাবছে ইসরাইল।’ আন্তর্জাতিক আদালত মোট ১৭ জন বিচারক নিয়ে গঠিত। এ মামলায়ও একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
ইসরাইলের পক্ষ থেকে বিচারকের আসনে বসেছেন, গাজা হামলার সবচেয়ে বড় সমর্থক ও কট্টর ফিলিস্তিন বিরোধী বিচারক আহারন বারাক। তিনি ইসরাইল সুপ্রিমকোর্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বিচারপতি হিসাবে দেশটিকে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাবেক উপ-প্রধান বিচারপতি ডিকগাং মোসেনেকে। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক জন ডুগার্ড। দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী আদিলা হাসাম, দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা, জোহানেসবার্গ বারের অ্যাডভোকেট টেম্বেকা এনগকুকাইতোবি এবং আন্তর্জাতিক আইনজীবী ম্যাক্স ডু প্লেসিস। দলে আইনজীবী শিদিসো রামোগালে, সারাহ পুডিফিন-জোনস এবং লেরাটো জিকালালাও রয়েছেন।
পরামর্শ দাতা হিসাবে রয়েছেন, আইরিশ আইনজীবী ব্লিন নি ঘ্রালাই এবং ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ভন লো। দুই বিচারকের বক্তব্যের পর নেদারল্যান্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ভুসিমুজি মাদনসেলা বক্তৃতার কার্যপ্রণালি শুরু করেন। বলেন, গাজায় ইসরাইল যা করছে তা গণহত্যা। এটি ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত অবৈধ কাজের ধারাবাহিকতার অংশ। এর পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেছেন, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলে সহিংসতা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়নি। ফিলিস্তিনিরা গত ৭৬ বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিক নিপীড়ন ও সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে। শুনানিতে আইনজীবীদের পক্ষে প্রথম বক্তা ছিলেন আদিলা হাসিম। ইসরাইলকে তুলোধনা করে বলেন, ইসরাইল প্রতি সপ্তাহে গাজায় ৬ হাজার বোমা ফেলেছে। কমপক্ষে ২০০ বার ২ হাজার পাউন্ড বোমা দক্ষিণ গাজায় ফেলা হয়েছে। কেউই রেহাই পায়নি।
এমনকি সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুও নয়। জাতিসংঘ গাজাকে শিশুদের কবরস্থান হিসাবে অভিহিত করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরে বলেন, পরিস্থিতি এমন যে, গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান সেখানকার মানুষকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। গাজায় আরও বেশি মানুষ অনাহারে এবং রোগে মারা যেতে পারে। আরও বলেন, গাজায় জেনেভা কনভেনশনকেও পাত্তা দেয়নি ইসরাইল। কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২ লঙ্ঘন করেছে। ইসরাইলের এ কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন তিনি। অধ্যাপক জন ডুগার্ড বলেছেন, ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইল নির্বিচারে নিরীহ ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের হত্যা করেছে। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আইনজীবী ব্লিন নি ঘ্রালাই বলেছেন, ইসরাইলের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য জরুরি অস্থায়ী ব্যবস্থার প্রয়োজন। ব্যারিস্টার ভন লোও বলেছেন, ইসরাইল গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতার বিপরীতে কাজ করেছে কিনা, তা নির্ধারণ করবে আন্তর্জাতিক আদালত।
গাজায় ইসরাইলের ভয়াবহ আক্রমণ নিয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী টেম্বেকা এনগকুকাইতোবি। তার মতে, নকশা করেই গাজায় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে ইসরাইল। বলেন, ‘গাজায় ধ্বংসের মাত্রা- বাড়িঘর এবং বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা, শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সবই স্পষ্ট করে যে গণহত্যার পরিকল্পনাই বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়েছে। ইসরাইলের স্পষ্ট উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংস করা।’ এরপর তিনি প্রমাণ হিসাবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কিছু বিদ্বেষাত্মক বক্তব্য তুলে ধরেন। বলেন, ‘ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উসকানিতেই গাজায় গণহত্যা হয়েছে।’ প্রমাণ উপস্থাপনে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নেতানিয়াহুর এক বক্তব্যের বাইবেলের কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক আদালতে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইল এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতা নিয়াহো শাস্তির মুখোমুখি হবেন বলে আশাবাদ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের।
Posted ৫:৫৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh